HSC Physics 1st Paper Chapter-9 (Wave) | পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্র অধ্যায় -৯ | তরঙ্গ
তরঙ্গের ধারণা এবং তরঙ্গের প্রকারভেদ
তরঙ্গ : কোন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের কণাগুলো স্থানান্তর ছাড়া যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলনের দ্বারা এক স্থান হতে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত হয় তাকে তরঙ্গ বলে।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
✅ বিভিন্ন কণার সম্মিলিত কম্পনের ফলেই হলো তরঙ্গ।
✅ তরঙ্গের বিস্তার আছে, দৈর্ঘ্য আছে , তরঙ্গ মুখ আছে, ও কম্পন আছে।
✅ তরঙ্গ অগ্রগামী বা স্থির হতে পারে।
✅ তরঙ্গ আড় বা লম্বিক হতে পারে।
✅ তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার এবং অপবর্তন ঘটে।
✅ তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি সঞ্চালন করে।
তরঙ্গের প্রকারভেদ
সরল দোল তরঙ্গ বা সাইন তরঙ্গ: মাধ্যমের কণাগুলোর সরল দোল গতিতে কম্পিত হলে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে সরল দোল তরঙ্গ বা সাইন তরঙ্গ বলে।
✅এই সরল দোল তরঙ্গ বা স্পন্দনের প্রকারভেদ অনুসারে তরঙ্গ দুই প্রকার।
অনুপ্রস্থ বা আর তরঙ্গ: যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয়
সেই তরঙ্গকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে।
উদাহরণ : পানি তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ, তাপ তরঙ্গ, বেতার তরঙ্গ,তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ ।
অনুপ্রস্থ বা আড় তরঙ্গের-
উদাহরণ মনে রাখার কৌশল — টেকনিক: বোতলে পানি আছে।
বো = বেতার তরঙ্গ
ত = তাপ তরঙ্গ , তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ
পা = পানি তরঙ্গ
আ = আড় তরঙ্গ
লম্বিক তরঙ্গ/ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ/ দীঘল তরঙ্গ: যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয় সেই তরঙ্গ কে দীঘল তরঙ্গ বলে।
উদাহরণ- শব্দ স্প্রিং এর দৈর্ঘ্য বরাবর সৃষ্ট তরঙ্গ,বাঁশির সুর,ঢোল বা তবলায় বাড়ি দিলে সৃষ্ট তরঙ্গ।
অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য-
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ
✅ অনুপ্রস্থ বা আড় তরঙ্গ যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমকোণী অগ্রসর হয় আড়তরঙ্গ।
✅ মাধ্যমে তরঙ্গচূড়া ও তরঙ্গ খাজ উৎপন্ন করে সঞ্চালিত হয়।
✅ একটি তরঙ্গচূড়া ও তরঙ্গ খাজ নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত।
✅ সমবর্তন বা পোলারায়ন ঘটে।
অনুদৈর্ঘ্য বা দীঘল তরঙ্গ
✅ যে তরঙ্গ মাধ্যমের কনা গুলোর কম্পনের দিকের
সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয়, তাই দীঘল তরঙ্গ।
✅ সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়।
✅ একটি সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত।
✅ সমবর্তন ও পোলারায়ন ঘটে না।
মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে তরঙ্গ দুই প্রকার। যথা-
(i) যান্ত্রিক তরঙ্গ (II) অ-যান্ত্রিক তরঙ্গ বা তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ।
যান্ত্রিক তরঙ্গ : যেসব তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের প্রয়োজন হয় সেগুলোকে যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে।
উদাহরণ: শব্দতরঙ্গ, টানা তারের সৃষ্ট তরঙ্গ, পানি তরঙ্গ, স্প্রিং এর তরঙ্গ প্রভৃতি।
অ-যান্ত্রিক তরঙ্গ/ তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ:
যেসব তরঙ্গ মাধ্যম ছাড়া সঞ্চালিত হয় সেগুলোকে তাড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ বা অ-যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে।
উদাহরণ : আলোক তরঙ্গ।
✅ তৃতীয় আরো এক ধরনের তরঙ্গ আছে তা হল বস্তু তরঙ্গ। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পরমাণুর সাথে এই তরঙ্গ সংশ্লিষ্ট।
শক্তি প্রবাহের দিক অনুসারে তরঙ্গ কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-
(i) একমাত্রিক তরঙ্গ সুতা বরাবর প্রবাহিত তরঙ্গ ।
(ii) দ্বিমাত্রিক তরঙ্গ পানির উপরিভাগে প্রবাহিত তরঙ্গ ।
(III) ত্রিমাত্রিক তরঙ্গ শব্দ তরঙ্গ আলোক তরঙ্গ।
অগ্রগামী তরঙ্গ: বিস্তৃত মাধ্যমে এক স্তর থেকে অন্য স্থলে সঞ্চালিত হয়ে ক্রমাগত সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয়। পানির ঢেউ, শব্দ ইত্যাদি।
অগ্রগামী তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য-
✅ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের ঘনত্ব ও স্থিতিস্থাপকতার উপর নির্ভর করে।
✅ কনা গুলোর কম্পন প্রবাহের সাপেক্ষে আড় বা লম্বিক হতে পারে।
✅ মাধ্যমের কণাগুলো কখনো স্থির থাকে না।
✅ বিভিন্ন অংশের চাপ ও ঘনত্বের পরিবর্তন একই রকমের।
✅ দশা পার্থক্য দূরত্বের সমানুপাতিক।
✅ তরঙ্গ মুখের অভিলম্ব বরাবর শক্তি বহন করে এ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।
✅ মাধ্যমের প্রতিটি কণার কম্পাঙ্ক ও বিস্তার একই হয় এবং তারা একই ধরনের কম্পনে কম্পিত হয়।
✅ মাধ্যমের যে কোন কণার বিভিন্ন ধর্ম যেমন- বেগ, ত্বরণ, শক্তি প্রভৃতি একই রূপে মাধ্যম দিয়ে যায়।
✅ মাধ্যমের কণাগুলোর দশা এক কণা থেকে অন্য কণায় সঞ্চালিত হয়।
স্থির তরঙ্গ: কোন মাধ্যমের একটি সীমিত অংশে পরস্পর বিপরীতমুখী সমান বিস্তার ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অগ্রগামী তরঙ্গ একে অপরের উপর আপতিত হলে যে নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি হয় হয় তাকে স্থির তরঙ্গ বলে
স্থির তরঙ্গ সৃষ্টির শর্ত
✅ একটি সীমাবদ্ধ মাধ্যমের প্রয়োজন।
✅ একই কম্পাঙ্ক এবং বিস্তার সম্পন্ন দুটি অগ্রগামী তরঙ্গের প্রয়োজন।
✅ দুটি বিপরীতমুখী অগ্রগামী তরঙ্গের প্রয়োজন।
✅ আগত ও প্রতিফলিত তরঙ্গদ্বয়ের উপরিপতন হতে হবে।
✅ তরঙ্গ শীর্ষ তরঙ্গের অবস্থানে প্রসারিত হয়।
✅ তরঙ্গ পৃষ্ট অনুভূমিক অবস্থানে সংকুচিত হয়।
✅ দুটি অভিন্ন চল তরঙ্গ বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়ে একে অন্যের উপর পতিত হতে পারে।
✅ তরঙ্গ দুটি একই বেগে বিপরীত দিক থেকে অগ্রসর হয়।
স্থির তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
✅ স্থির তরঙ্গে স্থির বিন্দুগুলো ছাড়া অন্য কণাগুলো পর্যায়ে গতি লাভ করে।
✅ বিভিন্ন বিন্দুর বিস্তার বিভিন্ন যে বিন্দুতে বিস্তার সর্বাধিক তাকে সুস্পন্দ বিন্দু বলে।
✅ কতগুলো বিন্দুতে মাধ্যমের কণাগুলোর কোন স্পন্দন দেখা যায় না তাকে নিস্পন্দ বিন্দু বলে।
✅ স্থির তরঙ্গের প্রত্যেক পূর্ণ কল্পনে কনা গুলো দুবার স্থির অবস্থানে আসে।
✅ পরপর তিনটি নিস্পন্দ বিন্দু / সুস্পন্দ বিন্দু নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত হয়।
✅ বিন্দুর কণার বিস্তার তরঙ্গ সৃষ্টিকারী মূল তরঙ্গ অস্থিত কণার বিস্তারের দ্বিগুণ।
✅ নিস্পন্দ বিন্দুতে চাপ ও ঘনত্ব বেশি পরিবর্তন হয় এবং সুস্পন্দ বিন্দুতে চাপ ও ঘনত্বের পরিবর্তন শুন্য।
✅ এই তরঙ্গ কোন একটি মাধ্যমের সীমিত অংশে উৎপন্ন হয় ।
✅ অগ্রগামী তরঙ্গের ন্যায় অগ্রসর না হয়ে একই স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে।
✅ কণাগুলোর পর্যায় কাল সমান হলে বিস্তার সমান হয়।
✅ পাশাপাশি দুইটি স্পন্দন বিন্দুর মধ্যবর্তী সকল কণা একই দশায় থাকে কিন্তু বিভিন্ন বিস্তার থাকে।
✅ লম্বিক তরঙ্গের লেখচিত্র একটি সাইন সদৃশ রেখা।
শব্দ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
✅ শ্রাব্যতার সীমা হচ্ছে 20Hz থেকে 20,000Hz।
✅ শব্দেতর তরঙ্গ হবে যদি এর কম্পাঙ্ক 20Hz এর কম হয়।
✅ লম্বিক তরঙ্গের পোলারায়ন ঘটে না অথচ আড় তরঙ্গের পোলারায়ন ঘটে।
✅ আলোক তরঙ্গ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ।
✅ শব্দোত্তর হচ্ছে 20,000Hz এর বেশি শব্দ।

.jpg)